নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ

সফরকারি নিউজিল্যান্ডকে ৬০ রানে আটকে দিয়ে ৭ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ১৫ ওভার ৬২ রান করে টাইগাররা। এই জয়ের মধ্যদিয়ে প্রথমবারের মতো ব্ল্যাকক্যাপসদের টি-টোয়েন্টিতে হারালো বাংলাদেশ।

৬১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে মাত্র ১ রান করেই সাজঘরে ফিরেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১ রানে তার বিদায়ে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ওয়ান ডাউনে নামা লিটন দাসকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন সাকিব আল হাসান। তবে সাকিবকে সঙ্গ দিতে পারলেন না অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে দলে না থাকা লিটন কুমার দাশ।

তৃতীয় ওভারের শেষ বলে দলীয় ৭ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১ রান করে প্যাটেলের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে আউট হন লিটন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৫ ওভারে ১২ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন সাকিব ও মুশফিক।

দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলতে থাকেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। তাদের জুটি থেকে আসে ৩০ রান। দশম ওভারে দলীয় ৩৭ রানের মাথায় রাচিন রবীন্দ্রের বলে উইকেটরক্ষক ল্যাথামের গ্লাভসে আটকে ৩৩ বলে দুই চারে ব্যক্তিগত ২৫ রান করে মাঠ ছাড়েন সাকিব।

বাকি সময়টুকু মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে অনায়াসেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। মুশফিক ১৬ ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান।

এরআগে, টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের পুরনো রেকর্ডেই আবারে অলআউট নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ৬০ রানে অলআউট হয় সফরকারিরা। মুস্তাফিজ নেন তিন উইকেট।

বাংলাদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড এমনিতেই খারাপ। তার মধ্যে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছে টাইগাররা। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে শুরুটা হলো দুর্দান্ত। স্কোরবোর্ডে ১০ রান যোগ করার আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে থাকে সফরকারি নিউজিল্যান্ড।

ম্যাচের প্রথম ওভারেই শুরুটা করেন মেহেদী হাসান। রবীন্দ্র রাচিনকে কোনো রান করার আগেই সাজঘরে ফেরান তিনি। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রাচিন রবীন্দ্র। তৃতীয় ওভারে উইল ইয়ংকে বোল্ড করেন সাকিব। চতুর্থ ওভারে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও টম ব্লান্ডেলকে ফিরিয়ে দেন নাসুম আহমেদ। নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং লাইন আপ যে স্পিনের বিপক্ষে কতটা অসহায়, সেটাই যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠলো আরেকবার।

এরপর চাপ সামাল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন অধিনায়ক ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলস। পঞ্চম উইকেটে দুজনে গড়েন ৩৪ রানের পার্টনারশিপ। তবে তাদের সাজঘরে ফিরিয়ে পথের কাঁটা দূর করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। খেলার ১১তম ওভারে সাইফউদ্দিনের বলে নাসুম আহমেদকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ল্যাথাম। ল্যাথাম ২৫ বলে ১৮ ও নিকোলস ২৪ বলে ১৭ রান করেন।

তার এক ওভার পরেই অর্থ্যাৎ ১২তম ওভারে আবারো সেই সাকিবের আঘাত। মুশফিকুর রহীমের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানেই মাঠ ছাড়েন কোল ম্যাকঞ্চি। ১৩তম ওভারে আবারো সেই সাইফউদ্দিন। এবার তিনি তুলে নিলেন হেনরি নিকোলকের উইকেট। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ১৭ রানে মাঠ ছাড়েন তিনি। ১৫তম ওভারের প্রথম বলেই এজাজ প্যাটেলকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজুর রহমান। একই ওভারের শেষ বলে ডগ ব্রেসওয়েলকে আউট করেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজ।

খেলা দেখে মনে হচ্ছিলো সফরকারিদের অলআউট হওয়াটা যেনো সময়ের ব্যাপার। ঠিক হলোও তাই। পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারলো না ব্ল্যাকক্যাপসরা। ১৭তম ওভারের শেষ বলে মুস্তাফিজুর রহমানের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন জ্যাকব ডাফি।

শেষদিকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপও। ১৮ রানের ব্যবধানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে কিউইরা অলআউট হয় ৬০ রানে, ১৬.৫ ওভার ব্যাট করে। ল্যাথাম ও নিকোলস ছাড়া কারও রানই দুই অঙ্কের দেখা পায়নি।

বাংলাদেশের পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান; ২.৫ ওভার বল করে মাত্র ১২ রানের খরচায়। এছাড়া দুটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৪ ওভার বল করে সাকিব খরচ করেছেন মাত্র ১০ রান।

বাংলাদেশ দল : লিটন কুমার দাস, নাইম শেখ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন দ্রুব, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), শেখ মাহাদি হাসান, সাইফ উদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান ও নাসুম আহমেদ।

নিউজিলান্ড একাদশ: হেনরি নিকোলস, উইল ইয়ং, রাচিন রবীন্দ্র, টম ল্যাথাম (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), টম ব্লান্ডেল, কোল ম্যাকঞ্চি, কলিন ডি গ্রান্ডহোম, ডগ ব্রেসওয়েল, ব্লেয়ার টিকনার, জ্যাকব ডাফি ও এজাজ প্যাটেল।